Friday, July 26, 2013

তেঁতুল তত্ত্ব কঠোর সত্য নিন্দুক জ্ঞানপাপী -আবদুল্লাহ বিন সাঈদ জালালাবাদী আল আযহারী



রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসে আছে : যার সম্মুখে তার কোনো  ভাইয়ের গীবত করা হয় আর সে তার সপক্ষে সহযোগিতাকারীরূপে না দাঁড়ায় (গীবতকারীকে প্রশ্রয় দিয়ে যায়), তাকে আল্লাহ তার নিজ ঘরেই অপদস্থ করবেন।

আল্লামা আহমদ শফী সাহেব যখন আল্লাহর পবিত্র ঘরের যিয়ারতে মক্কা মুকার্রমায় অবস্থান করছিলে, ঠিক তখনই এখানকার একশ্রেণীর মতলববাজ নিন্দুক যে ভাষায়, যে আঙ্গিকে পত্রপত্রিকা ও ইলেক্ট্রনিক প্রচারমাধ্যমসমূহে এমন কি আইন রচনার কেন্দ্র পবিত্র সংসদে দাঁড়িয়ে তাঁর বিরুদ্ধে কুৎসা রটনার আভিযান চালিয়ে যাচ্ছিল! তাতে, তার্ঁ স্বপক্ষে দাড়িয়ে এর প্রতিবাদ না করলে মহানবী স: এর পবিত্র মুখে উচ্চারিত সেই অপদস্থতা অবধারিত। তা যেহেতু কারো কাম্য হতে পারেনা, তাই আজকের এই প্রবন্ধের আবতারণা।

ইদানিং আমাদের দেশে সর্বক্ষেত্রে যেরূপ অনিয়ম ও অরাজকতার জয় জয়কার, তাতে ব্যাপারটি অপ্রত্যাশিত বা অস্বাভাবিক না হলেও এটা যে একান্তই অনাকাঙ্খিত অবাঞ্ছিত ব্যাপার, তাতে দ্বিমত করার অবকাশ কোথায়?

সেই ছোট বেলা থেকেই শুনে আসছি, পুলিশ যদি কাউকে একান্তই গুলি করতে বাধ্য হয়, তাহলে সে সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তির হাঁটুর নিচেই গুলি করবে। তার উপরের অংশে গুলি করলে তাও একটি দন্ডনীয় অপরাধ। অনুরূপ সংসদীয়  ভাষা ও অসংসদীয় ভাষা বলে একটা কথা বহুকাল ধরে চালু ছিল। কিন্ত আজকাল সংসদে দাঁড়িয়ে যার যেমন ইচ্ছে দাঁতমুখ খিঁচিয়ে ইতরজনের ভাষায় যে কোন সম্ভ্রান্ত সম্মানী মানুষের চৌদ্দ পুরুষ উদ্ধার করার পূর্ণ স্বাধীনতা সংসদীয় ভাষা সম্পর্কে অনভিজ্ঞ বা তা মানতে অনাগ্রহী দামিম্ভকরা ভোগ করে যাচ্ছেন! স্পীকারের আসনে বসা দলীয় মনোভাবাপন্ন  অ-নিরপেক্ষ ব্যক্তিরা হয় নিজেরাও তা উপলব্ধি করতে পারছেন না, না হয় দলীয় আনুগত্যের নিগড়ে আবদ্ধ বলে অসহায়ের মত তা কেবল শুনেই যাচ্ছেন! টেবিলে হাতুড়ি পেটাচ্ছেন না, বা কাউকে সামান্যতম তিরস্কার করতেও তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না! আমরা যতদূর আনি, কারো ভুল বক্তব্যের প্রতিবাদ করতে হলে সংসদীয় ভাষায়ই তা করতে হয়। প্রতিপক্ষের বক্তব্যকে অসত্য বলা যাবে - তা মিথ্যা বলা যাবে না। কারো বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা রুজু করেই বিচারাধীন মামলায় অভিযুক্তকে অপরাধী বলে প্রচার করাটাও গর্হিত কাজ। জাতীয় সংসদের মহান চত্বরে হলে তো তা আরো বেশি গর্হিত। কোনো দায়িত্বশীল মন্ত্রীর মুখে তা আরো বেশি বে-মানান।

সংসদে অনুপস্থিত এমন কোন ব্যক্তি যার সংসদে দাঁড়িয়ে স্বপক্ষ অবলম্বন করে তার ব্যাখ্যা দেয়ার বা প্রতিবাদ করার সুযোগ নেই, তার বিরুদ্ধে সংসদে বক্তব্যদানও অসংসদীয় কাজ এবং নেহাৎই অগ্রহণীয়। আল্লামা আহমদ শফী সাহেব এ দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম এবং যারা তাঁর বিরুদ্ধে নিন্দাবাদ করছেন, তাদের অনেকের তিনি বাপের আবার অনেকের দাদার বয়েসী একজন বুযুর্গ ব্যক্তিত্ব। তাঁর কোনো রাজনৈতিক পরিচয় বা রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা, রাজনৈতিক অভিলাষ নেই। এখন তিনি পবিত্র হেরেম শরীফে অবস্থানরত। দেশে থাকলেও সংসদের তিনি সদস্য নন। তাই সংসদে দাঁড়িয়ে তাঁর এ সব আ-কথা কু-কথার জবাব দেওয়ার কোনো সুযোগই নেই। এমতাবস্থায় সংসদে দাঁড়িয়ে যাঁরা এমনটি করেছেন, তাদের কাজের কোনো বৈধতা নেই।

একজন  ফাঁসির আসামীকেও তাঁর নিজের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে বা তার নিজ বক্তব্যের তার প্রদত্ত ব্যাখ্যা না শুনে ফাঁসিতে চড়ানো নীতিবিরুদ্ধ। যাঁরা তাঁর বিদেশে অবস্থানরত অবস্থায় তাঁর বিরুদ্ধে অশ্লীল ও অসভ্য ভাষায় সমালোচনা করেছেন, তারা এর কী জবাব দেবেন তা আমাদের জানা নেই।

তাঁর পক্ষ থেকে হেফাজতে ইসলামের ভাষ্যকাররা যা বলছেন, তা হলো, যে সব বক্তব্য ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় তাঁর ওয়ায বলে বারবার প্রচার করে এদেশের জনগণকে ক্ষেপিয়ে তোলার প্রয়াস লক্ষ্য করা যাচ্ছে, এগুলো তাঁর বিভিন্ন সভায় প্রদত্ত বিভিন্ন বক্তব্যের ছাঁটকাট করা উদ্ধৃতি। পূর্বাপর বক্তব্যসমূই এতে সন্নিহিত নেই বলেই তা নেহাৎ আপত্তিকর ঠেকেছেএ ছাড়া এটা নেহাৎই তাঁর আঞ্চলিক গ্রাম্য শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে তাদেরই মত করে উচ্চারিত বক্তব্য। যে পরিবেশে দাঁড়িয়ে তিনি এসব বক্তব্য দিয়েছেন, এগুলো সে পরিবেশেরই চাহিদামত প্রদত্ত বক্তব্য। এতে গ্রাম্য ভাষা,  গ্রাম্য আঙ্গিক ও গ্রাম্য উপমা ব্যবহার করা হয়োছে। দৈনিক আমার দেশসম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মাহমুদুর রহমান আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালতেরবিচারকের হুবহু বক্তব্য বিদেশী পত্রিকার বরাতে প্রকাশ করাকে আমাদের  এই নিন্দুকরা যেখানে অপরাধ বলে গণ্য করেছেন - এমনি অপরাধ যে, এ জন্য তাঁকে কারাবরণ করতে হচ্ছে, তাঁর প্রেস-পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান-সংশ্লিষ্ট শত শত সাংবাদিক-প্রেসকর্মীকে বেকার করে ফেলা হয়েছে; অথচ মাওলানা আহমদ শফীর বিনা অনুমতিতে তাঁর বক্তব্যপ্রকাশ ও পুন:পুন: প্রচার করাকে মোটেই অবৈধ বা আপত্তিকর বিবেচনা করা হচ্ছে না! এটা কেমনতর যুক্তি? এটা তো ঠিক ব্রাহ্মণের ফতোয়া  যাতে মাকড় মারলে শূদ্র পুত্রের প্রায়শ্চিত্ত লাগে, কিন্তু ব্রাহ্মণপুত্র মাকড় মারলে ধোকড় হয়!

তর্কের খাতিরে আমরা ধরেই নিলাম, আল্লামা শফী সাহেব সত্য সত্য নারীদের পুরুষদের জন্য লোভনীয় তেঁতুল তুল্য বলেছেন এবং তাদের সাথে অবাধে মেলামেশাকে নিরুৎসাহিত করার জন্যে তাগিদের সাথে পুন:পুন: কথাগুলো উচ্চারণ করেছেন। তিনি তো কারো পাঁজরের হাড্ডি দিয়ে ডুগডুগি বাজাবার  পৈশাচিক আকাঙ্খা প্রকাশ করেননি - বা সংসদকে শূয়রের খোয়াড় বলার মত ঔদ্ধত্য দেখাননি - যা আমাদের বাম রাজনীতিকরা দীর্ঘ দিন ধরে করে এসেছেন।

নারীরা যে পুরুষদের কাছে অত্যন্ত লোভনীয় এবং তাদের অবাধ মেলামেশায় যে নানা অনর্থের সৃষ্টি হয় তা কি অবাস্তব কথা?

স্বয়ং আল্লাহই তো পবিত্র কুরআনে বলেছেন :
ঝুয়্যেনালিন নাসি হুব্বুশ শাহওয়াতে মিনান নিসা...
অর্থাৎ : মানুষের জন্যে নারীদেরকে রমণীয়-লোভনীয় করা হয়েছে।” (সূরা আলে ইমরান : ১৪)
নূর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো আমাদেরকে দোয়াই শিখিয়েছেন :
আল্লাহুম্মা আউযুবিকা মিনা ফিতানাতিন নিসা।
 অর্থাৎ হে আল্লাহ আমাদেরকে নারী জাতির ফিৎনা থেকে রক্ষা করুন। (আল হাদীস)

তাহলে আহমদ শফী-এর দোষ কোথায়। এ সমস্ত আয়াত ও হাদীসে সমালোচকরা বিশ্বাস করেন কি না তা এদেশের মুসলিম জনতা জানতে চায়।


মোমেনশাহীর বিখ্যাত গায়িকা মমতাজ-যিনি এখন উঁচু মহলের গুণগ্রাহিতার সুবাদে একজন মাননীয়আইন প্রণেতা সংসদসদস্য, তিনি যদি হাজার হাজার যুবকের সম্মুখে কোমর বাঁকিয়ে হাসিমুখে নেচে নেচে গানের কলি আওড়ান যুবক হচ্ছে আগুনের গোলা, আর হাজার হাজার কিশোর-যুবক হৈ-হল্লা করে উচ্ছ্বাসে আবেগে তাঁকে ধন্য ধন্য করে নেচে ওঠে তাকে না হয় নেহাৎই গানের কলি বলে উড়িয়ে দিলেন, মহাত্মা গান্ধীর মত একজন সাধু সন্ন্যাসী যাকে মি. জিন্নাহ বলতেন ল্যাংটা ফকীর’, তাঁর আত্মজীবনীতে যখন তিনি লিখেন : সত্তর বছর বয়সে যখন নারী সংস্পর্শে আমার লিংগ উদ্রিত হলো তখন আমার বিস্ময়ের সীমা রইল নাতখন শতকোটির দেশের প্রভাবশালী বাপুজীরএই সত্য কথনকে পাঠক কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন? নিন্দুকরাই বা এর কী জবাব দেবেন?

আদি মানব হযরত আদম (আঃ) নারীর কথায় কান দিয়ে নিষিদ্ধ ফল খেয়ে চিরশান্তির আবাস বেহেস্ত থেকে নির্বাসিত হয়েছিলেন বলে গোটা খৃষ্টান জগত নারী জাতিকে অভিশপ্ত জ্ঞান করে।

পৃথিবির প্রথম নরহত্যা হয়েছিল এই নারীকে কেন্দ্র করেই। আদম (আঃ)-এর প্রথম সন্তান কাবিল সহদোর ভাই হাবিলকে হত্যা করে - বাইবেলে যার বর্ণনা সবিস্তারে রয়েছে (বাইবেল যাত্রা পুস্তক অধ্যায় ৪:১-১৫)।

৮০-৯০ বছর আগে যখন বৃটিশ সাম্রাজ্যে সূর্য অস্ত যেতনা তখন বিশাল সাম্রাজ্যের সম্রাটের পদ ৮ম এডওয়ার্ড স্বেচ্ছায় ত্যাগ করেছিলেন এক কূল-মান-হীন সুন্দরীকে পাওয়ার জন্য।

আমাদের তথাকথিত উচ্চশিক্ষিত ও অত্যাধুনিকরা যতই ফুটানী করুন, যতই সাধুসজ্জন বনে গিয়ে আল্লামা শফীকে গালাগাল করুন, আমাদের জাতীয় কবির ফজীলাতুননেসার জন্যে পাগলামী আর বর্ধমান হাউসে গান শিখাতে গিয়ে গানের হিন্দু ছাত্রীর প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে পাড়ার হিন্দু গুণ্ডাদের হাতে মার খাওয়ার কথা তারা কীভাবে অস্বীকার করবেন? স্বয়ং কবির বন্ধু জাতীয় অধ্যাপক কাজী মোতাহার হোসেন বাংলা একাডেমীতে অনুষ্ঠিত এক সভায় সেই পাকিস্তানি আমলেই নজরুল পিটানোসে লাঠিটি তাঁর কাছে তখনো মওজুদ থাকার কথা প্রকাশ্য সভায় উচ্চারণ করেছিলেনআমি নিজে সে সভার একজন শ্রোতা ছিলামএই মাত্র কদিন আগে এক তন্বী নায়িকা মিতানূরের তথাকথিত আত্মহত্যায় কি তাঁদের চোখ খুলেনি? বাঙ্গালী জাতির (অবশ্য পশ্চিমবাংলার দাদারা আমাদেরকে বাঙ্গালী বলেন না, বলেন বাঙ্গাল’) গর্বের শেখ পরিবারের ছেলে-মেয়েরা যে এখন ইয়াহুদী-খ্রিস্টান পরিবারে মিশে একাকার হয়ে গেলেন, তার পেছনে কোন্ সত্যটাই বা নিহিত? হিন্দু পরিমল মাস্টার যে মুসলিম ছাত্রীদেরকে বলাৎকার করে চলে দিনের পর দিন আর মুসলিম প্রিন্সিপাল মহিলা তা চাপা দিয়ে যান তার পেছনে কোন্ সত্যটি লুকিয়ে আছে? জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগনেতার ধর্ষণের সেঞ্চুরীর জন্য গর্ব করার মৌল উপাদানটা কী ছিল? সব কিছুর পেছনেই সে দিবালোকের  মত সত্য তেঁতুল তত্ত্ব’! সুতরাং লম্ফঝম্ফ ছেড়ে সত্যকে অবনত মস্তকে মেনে নেয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

এই মাত্র কিছু দিন আগে তথাকথিত ব্লগাররা আল্লাহ-রাসূল (সাঃ) নিয়ে যখন অকথ্য ভাষায় বিশ্বব্যাপী প্রচারণা চালালো, হিন্দু যুবকরা মুসলিম নামে এসব অমার্জনীয় ঔদ্ধত্য দেখালো, তখন কোথায় ছিলেন ঐ সব্যসাচীর উত্তরীয় পরিধানকারী কলাম লেখক সৈয়দ? কোথায় ছিলেন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ? কোথায় ছিলেন নামাযী-হেজাবী-তাসবীহওয়ালী জননেত্রী? কোথায় ছিলেন বঙ্গবন্ধুর পাজরের হাড্ডি দিয়ে ডুগডুগি বাজাবার আকাঙ্খা পোষণকারীণী সেকালের অগ্নিকন্না ও আজকের মন্ত্রী?  সেদিন তাঁরা ওদেরকে বাহবা দেওয়ার জন্যে কেউ ছুটে গিয়েছিলেন শাহবাগ চত্বরে যুবক যুবতীর দিবারাত্রি চব্বিশ ঘণ্টার মিলন-মেলায়!

সেদিন প্রতিবাদে জ্বলে উঠেছিলেন ঐ নব্বই বছরের বৃদ্ধ আল্লামা আহমদ শফীই। সেদিন আপনারা ঐ কুলাঙ্গারদের নিন্দা করতে গরজ বোধ করেননি! বরং ইনিয়ে বিনিয়ে বলার  চেষ্টা করেছিলেন এটা নেহাৎই জামাতীদের কারসাজি। ওরাই চাতুরী করে ব্লগারদের নামে ব্লাসফেমী কাণ্ড করেছে। তারপর যখন আসল সত্য বেরিয়ে এলো যে, এক বছর আগেই মহামান্য আদালত একটি মামলার প্রেক্ষিতে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে ওদেরকে গ্রেফতার করার আদেশ জারী করেছিলেন তখন তাঁরা চুপসে গিয়েছিলেন। লোক দেখানো গ্রেফতার গ্রেফতার নাটক করেছিলেন। সে নাটকের ফল ভাল হয়নি। দেশবাসী তাওহীদী জনতা বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে। স্মরণকালের বিশাল প্রতিবাদ মিছিল লংমার্চ করে তারা এসে দুই দুইবার শাপলাচত্বরে সমবেত হয়ে বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিয়েছে নেতানেত্রীরা যতই বলুক, বাঙ্গালী জাতি ইসলামের কথা ভুলে গিয়ে শক-হুনদল পাঠান-মোঘল এক দেহে লীনহয়ে ধর্ম বিবর্জিত নতুন এক বাংলাদেশ  জেগে উঠেছে,    তারা মিথ্যাবাদী।

বাংলার মানুষ আজো শাহজালাল-শাহমখদুমের-শাহবদর-কুৎবুল আলম, তীতুমীর-হাজী শরীয়তউল্লাহর পতাকা বহন করে চলেছে। তারা আজো মুসলিম, কালও মুসলিম এবং মরণ পর্যন্ত মুসলিম পরিচয়েই বেঁচে থাকবে। মহা ভারতের মহামানবের সাগরতীরেতারা লীন হতে রাজি নয়। আল্লামা আহমদ শফী যেহেতু সে কাফেলার সিপাহসালার  তাই সম্মিলিত বাতিল শক্তি তাঁর পেছনে লেগেছে। তেঁতুল রহস্যের ধুঁয়া তুলে তাঁকে হেনস্তা করার অপচেষ্টা করছে। কিন্তু কুত্তা যতই ঘেউ ঘেউ করুক না কেন, হাতীর অগ্রযাত্রা তাতে একটুও ব্যাহত হবে না ইনশাআল্লাহ।

অবস্থার দৃষ্টে বলতে হচ্ছে
তেঁতুল তত্ব কঠোর সত্য মানে না ভণ্ড হায়,
বেচারা সত্য সাথী হারা আজ পথে পথে কাতরায়!

এ জন্যে বহুদিন পূর্বেই মহাজন মহাজ্ঞানী এক মনীষী আক্ষেপের সূরে বলেছিলেন, ‘সত্য বাবু মরিয়া গিয়াছেসত্য বাবু মরে গেলেও আজ থেকে প্রায় আশি বছর পূর্বেই আল্লামা আহমদ শফির চাটগাঁয়েরই এক কৃতী সন্তান মহবুবুল আলম মোমেনের জবান বন্দীনামে যে অমর গ্রন্থটি লিখে গেছেন,  তার পাতায় পাতায়  সে বিবরণ ছড়িয়ে রয়েছে। বাংলা একাডেমী থেকে সে পাকিস্তান আমলেই মুঝে এতেরাফ হ্যায়  (I do confess) শিরোনামে এর উর্দু ভাষ্য প্রকাশিত হয়েছিল। মাওলানা আব্দুর রহমান বেখূদ বইটির উর্দূ অনুবাদ করেছিলেন। লেখক মোমিন বলেই সত্য কথাগুলো লিখে যেতে পেরেছেন। ভণ্ডরা তা পারে না। এই মাত্র কদিন আগে প্রয়াত (তাদের রুচির দিকে লক্ষ্য করেই মরহুম শব্দটা লিখলাম না) নন্দিত নরকে, নুহাশ পল্লীতে শায়িত লেখকের জীবনের শেষ অংকটাতেও সে শিক্ষা নিহিত রয়েছে যিনি পরমা সুন্দরী শরীফ সুশিক্ষিতা আজীবন-সঙ্গিনী ও তাঁর উপযুক্ত পুত্রকন্যার মায়া বিসর্জন দিয়ে কন্যার বান্ধবী এক পিচ্চি মেয়েকে নিয়ে নন্দিত নরকেপ্রবেশ করাকেই শ্রেয় জ্ঞান করেছিলেন। সে মেয়েটি এখন কুলহারা বিধবা! এর পেছনেও সেই কঠোর বাস্তব তেঁতুল তত্ত্বযে  সব্যসাচী সৈয়দ এ প্রশ্নে খুব লেখালেখিতে ব্যস্ত লজ্জার মাথা খেয়ে লজ্জার নির্বাসিতা লেখিকা তসলিমা নাসরিন তাঁর সম্পর্কেও তার পুস্তকে মন্তব্য করেছে পিতৃসম এ সৈয়দতার দেহবল্লরীর এক নাজুক স্থানে হাত দিয়ে তাকে অবাক করেছিলেন! না, আর পারা গেল না। সাধু সাবধান! বেশী বাড়াবাড়ি করলে আরো অনেক নেতা-নেত্রীর থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়বে।

[ লেখক হযরত হাফেজ্জী হুজুর (রঃ)-এর আধ্যাত্মিক সন্তান এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের আলেমদের পুরোধা]

Tuesday, June 25, 2013

হেফাজত প্রসংগে সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ লিখেছেন : "হেফাজতের আন্দোলনে আমার সম্পৃক্ততার ব্যাখ্যা"



হেফাজতের আন্দোলনে আমার সম্পৃক্ততার ব্যাখ্যা
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ

[ লেখাটি দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন-এ ছাপা হয় ৬ই জুন ২০১৩, ১ম পৃষ্ঠায় ]

ভারাক্রান্ত মন নিয়েই দিনাতিপাত করছি দেশের অবস্থা, মানুষের দুর্দশা, রাজনৈতিক অস্থিরতা- সব মিলিয়ে চরম অস্বস্তির মধ্যে সময় কাটছে আমি নিজে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে অবস্থান করছি অথচ কী করব বুঝে উঠতে পারছি না সামনের সময়গুলো হয়তো আরও ভয়াবহ হবে

কতগুলো অহেতুক ইস্যু রাজনৈতিক পরিবেশকে তমসাচ্ছন্ন করে ফেলেছে এসব ইস্যু সৃষ্টির জন্য সরকারকেই দায়ভার গ্রহণ করতে হবে যেমন 'গণজাগরণ মঞ্চ' সৃষ্টি এবং সেই মঞ্চকে কেন্দ্র করে 'হেফাজতে ইসলাম'-এর আবির্ভাব ইত্যাদি বিষয় নিয়ে যে সংঘাতের রাজনীতির উদ্ভব, তা আমার কাছে অহেতুক ইস্যু বলেই মনে হয়েছে এসবের মধ্যে আমার কিছুটা সংশ্লিষ্টতা এসেছে এখান থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি, যেহেতু আমিও রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তবে যেটুকু সংশ্লিষ্টতা এর পেছনে রাজনৈতিক কারণ যতটুকু না ছিল, ধর্মীয় অনুভূতির প্রশ্নটাই আমার কাছে অনেক বড় ছিল কারণ আমি পবিত্র ইসলাম এবং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর অবমাননার বিষয়টি মেনে নিতে পারিনি আর অবমাননার বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীদের সমর্থন জানানোকে একটি ইমানি দায়িত্ব মনে করেছি আমি রাজনীতিবিদ না হলেও প্রশ্নে ব্যক্তিগতভাবে একই মনোভাব পোষণ করতাম প্রসঙ্গে আমার পক্ষে-বিপক্ষে কিছু অভিমত এসেছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও আমাকে তির্যক বাক্যে আঘাত করেছেন এসব নিয়ে আমার অবস্থান ব্যাখ্যা করলে দেশবাসী হয়তো সঠিক বিষয়টি অবগত হতে পারবেন

যুদ্ধাপরাধের বিচার সম্পর্কে আমি বা আমার দলের নীতির কথা ব্যক্ত করেছি বিচার কাজের সূচনালগ্নেই আমি বলেছি, যে কোনো অপরাধেরই বিচার হওয়া বাঞ্ছনীয় মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধ যা সংঘটিত হয়েছে তার বিচার ৪০ বছর পরে কেন, স্বাধীন দেশের যাত্রালগ্নেই হওয়া উচিত ছিল তবে দেরিতে হলেও সে বিচার যখন শুরু হয়েছে তখন তাকে আমরা প্রত্যাখ্যান করিনি বলেছি, বিচার যেন সুষ্ঠু এবং আন্তর্জাতিক মানের হয় মূলত যুদ্ধাপরাধের বিচারকে কেন্দ্র করে আলোচিত দুটি ইস্যুর সৃষ্টি হয়েছে বিচারের প্রথম রায় ঘোষিত হওয়ার পর দেশে কোনো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়নি দ্বিতীয় রায় ঘোষণার পর তরুণ সমাজের ঢাকাকেন্দ্রিক একটি অংশ শাহবাগে একত্রিত হয় তারা প্রতিবাদ জানিয়ে বলল, 'এটা একটা আপসের রায় হয়েছে, রায় আমরা মানি না' সেই তরুণরা স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ ছিল বলে আমিও তাদের অনুভূতিকে স্বাগত জানিয়েছিলাম পরে তাদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সংসদে একটি নতুন আইনও পাস হলো

পর্যন্ত ভালোই ছিল তাদের আন্দোলনে একটা বিজয় এসেছে, এখানেই ক্ষান্ত দেওয়া উচিত ছিল কিন্তু তা না করে ঘোষণা করা হলো, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসিতে না ঝুলিয়ে তারা ঘরে ফিরবে না এবং শাহবাগের অবস্থানও ছাড়বে না অবস্থানের নাম দেওয়া হলো 'গণজাগরণ মঞ্চ' গণজাগরণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে তিন স্তরে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হলো বিশ্বের ইতিহাসে কি এমন কোনো গণজাগরণের নজির পাওয়া যাবে, যে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় গণজাগরণ মঞ্চ হয়েছে?

শাহবাগের দেখাদেখি দেশের প্রায় সব জেলা-উপজেলায়ও ধরনের মঞ্চ তৈরি হয়ে গেল যতক্ষণ পর্যন্ত দেশের তরুণ সমাজের মধ্যে প্রতীয়মান ছিল যে এটা একটি গণমুখী আন্দোলন এবং স্বাধীনতার চেতনায় উজ্জীবিত ঐক্য, ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন সমর্থন পেয়েছে কিন্তু যে সময়ে স্পষ্ট হয়ে গেল এর পেছনে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা রয়ে গেছে, তখন সারা দেশের মঞ্চ থেকে তরুণরা সরে যেতে লাগল আর সেই সুযোগে প্রতিপক্ষ একের পর এক মঞ্চ ভেঙে দিতে শুরু করল তখনো যদি মঞ্চ থেমে যায় তাহলেও পানি এতটা ঘোলা হয় না এরই মধ্যে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চে ইসলামবিরোধী এবং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর অবমাননাকারী ব্লগারদের দৌরাত্দ্য অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে গেছে তার পাশাপাশি সেখানে এক প্যারালাল সরকারব্যবস্থা চালু হয়ে যায় তারা গোটা জাতিকে নির্দেশনা দিতে থাকে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের ঘোষণা আসে সব মিলিয়ে আমার কাছে মনে হলো, এরা ঔদ্ধত্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে অথচ কারও মুখে টুঁশব্দটি পর্যন্ত নেই অবস্থায় আমি আর চুপ করে বসে থাকতে পারলাম না বললাম, ইসলাম অবমাননাকারী এবং প্রিয় নবী (সা.)-কে হেয়প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টাকারী ব্লগারদের ওই মঞ্চ অবিলম্বে ভেঙে দিন তা না হলে মহাবিপর্যয় নেমে আসবে ন্যক্কারজনক তৎপরতা কিন্তু জাতি মেনে নেবে না বাস্তবে ঘটেছেও তাই অল্প সময়ের মধ্যেই গোটা দেশের আলেম সমাজসহ ধর্মপ্রাণ মানুষ তেতে ওঠে সেই পর্যায়ে আমি আরও বলেছি, তোমরা কি বঙ্গবন্ধু হয়ে গেছ যে জাতিকে নির্দেশনা দিচ্ছ? জাতীয় পতাকা উত্তোলনের নির্দিষ্ট সময় আছে তা ভঙ্গ করে যে কেউ পতাকা উত্তোলনের নির্দেশ দিতে পারে না এটা মেনে নেওয়া জাতীয় চেতনার পরিপন্থী আমি এসবের প্রতিবাদ করেছি এটা যদি কোনো মহল দোষ বলে বিবেচনা করে থাকে তাহলে আমার বলার কিছু নেই

আমি ঘটনার সূচনায় প্রথম প্রতিবাদ জানিয়েছি আর প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন হেফাজতে ইসলামের নামে দেশের আলেম-ওলামারা তাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে ইসলামপ্রিয় মানুষ হেফাজতে ইসলাম কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয় তারা ক্ষমতা গ্রহণও করতে চায় না তাদের দাবি ছিল যারা পবিত্র ইসলাম মহানবী (সা.)-কে অবমাননা করেছে তাদের বিচার করা হোক শুরুতে তাদের দাবির প্রতি সম্মান দেখিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে একটা ঘোষণা এলেই পরিস্থিতি এতদূর গড়াত না বাহ্যত এখন মনে হতে পারে হেফাজতের আন্দোলন দমন হয়ে গেছে কিন্তু কার্যত কি তাই? আলেম সমাজের মনের আগুন কি নিভে গেছে? যে আঘাত তাদের মনে লেগেছে তা কি সহজে ভুলে যাওয়ার মতো? তা ভোলাতে হলে সরকারকে অবশ্যই আলেম-ওলামাদের পাশে ফিরে আসতে হবে পরিস্থিতির জন্য ক্ষমা চাইতে হবে ক্ষমাপ্রার্থনা অসম্মানের কিছু নয় ক্ষমাপ্রার্থনার মধ্যে মনের উদারতা নমনীয়তার প্রকাশ ঘটে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি মার্কিন প্রেসিডেন্ট তারাও বহুবার ক্ষমাপ্রার্থনা করেছেন ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীও ক্ষমা চেয়ে হারানো ক্ষমতা আবার ফিরিয়ে নিয়েছেন দেশের মানুষ এখনো পাকিস্তানকে ভালো চোখে দেখে না, কারণ তারা বাংলাদেশে যে গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে তার জন্য এখনো ক্ষমাপ্রার্থনা করেনি দেশে জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে এবং জামায়াতের ওপর দেশের সিংহভাগ মানুষের যে ক্ষোভ-ঘৃণা রয়েছে তার অবসান ঘটে যেত অনেক আগেই, যদি তারা স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়ে তাদের কৃতকর্মের জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চাইত তাহলে আজ যে তাদের বিচারের সম্মুখীন হতে হচ্ছে এবং জামায়াতের তরুণ অনুসারীদের যে ভোগান্তি-নির্যাতন-নিপীড়ন সইতে হচ্ছে, এর কোনোটারই মুখোমুখি হতে হতো না তাই সরকারের প্রতি আমার একটা পরামর্শ থাকবে_ যা ঘটেছে তার জন্য দেশের আলেম সমাজের কাছে ক্ষমা চেয়ে সব ভুলে গিয়ে আসুন আমরা সব পক্ষ শান্তি-স্থিতিশীলতা এবং দেশ জনগণের কল্যাণের পথে ফিরে আসি আলেম-ওলামারা যখন ঢাকায় প্রতিবাদ সমাবেশ করতে এসেছিলেন তখন মেহমান হিসেবে আমার দলের পক্ষ থেকে তাদের পানি পান করানোর ব্যবস্থা করেছিলাম এটা কি দোষের কিছু করেছিলাম? সরকার যখন তাদের আসা এবং সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে, সেখানে তাদের সেবা দেওয়া কি অপরাধ ছিল?

মে ঢাকায় যা ঘটেছে তা আমি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারিনি এবং এখনো পারছি না হেফাজতের কর্মীরা ঢাকার চারপাশে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করে ঢাকায় প্রবেশ করেছেন গোয়েন্দা বিভাগের লোকজন ভালো বলতে পারবেন, ঢাকার বাইরে থেকে যেসব মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক বা আলেম-ওলামা ঢাকায় প্রবেশ করেছেন, তাদের হাতে কি গাছ কাটা করাত-কুঠার জাতীয় কিছু দেখা গেছে? তাদের সঙ্গে এক বোতল পানি আর কিছু চিড়া-মুড়ি ছাড়া কিছু কি ছিল? তারা শাপলা চত্বর এলাকায় শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিয়ে বসে ছিলেন ওই সময় বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেট পশ্চিম পাশে যা ঘটেছে সেখানে কি সত্যই কোনো হেফাজত কর্মী ছিলেন? গ্রাম থেকে যেসব মাদ্রাসা ছাত্র-শিক্ষক সেদিন ঢাকা এসেছিলেন, যারা এর আগে কখনো ঢাকা শহর দেখেনওনি, তাদের পক্ষে কি ওই ধরনের ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টি করা আদৌ সম্ভব ছিল? যাদের ধ্যান-জ্ঞান শুধুই কোরআন-হাদিস, তাদের পক্ষে কি সেই কোরআন-হাদিসে আগুন লাগানোর কথা চিন্তা করাও সম্ভব? অথচ সব দোষ চাপানো হলো হেফাজতের নিরীহ কর্মীদের ওপর কী নির্দয়ভাবে মধ্যরাতে তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হলো ওই রাতে কত আলেম-ওলামার প্রাণসংহার হয়েছে, কতজন শহীদ হয়েছেন, সেই সংখ্যার বিতর্কে আমি যেতে চাই না একজন হলেও তো শহীদ হয়েছেন সেই একজনকে হত্যার দায়ভারও কি কম? প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে যারা নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে তারা কারা? তাদের শনাক্ত করে জাতির সামনে উপস্থাপন করা হোক কারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চেয়েছে তাদের গ্রেফতার করে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করা হোক আমি বলেছি, যে কোনো ধর্ম-ধর্মবিশ্বাস-ধর্মগ্রন্থ-ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর আঘাত করা বা অবমাননা করার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের বিধান করা হোক দেশের জাতীয় মসজিদের সামনে কোরআন শরিফে আগুন লাগবে কিংবা কোথাও কোনোভাবে ধরনের ঘটনা ঘটবে, তা কোনো মুসলমান মেনে নিতে পারে না আমরা আশ্বস্ত হয়েছিলাম, যখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মুখে শুনেছিলাম যে 'যারা কোরআনে আগুন দিয়েছে তাদের কাউকে ছাড়া হবে না ভিডিও ফুটেজ দেখে একটা একটা করে ধরা হবে' কিন্তু কই? এক মাস গত হয়ে গেল ভিডিও ফুটেজ দেখে তো আজ পর্যন্ত একজনকেও গ্রেফতার করতে দেখলাম না

কোরআন শরিফ পোড়ানোর এত বড় ঘটনা, যা বিশ্বে আর কখনো কোথাও ঘটেছে বলে মনে হয় না এত কোরআন একসঙ্গে পুড়ল তার ভিডিও ফুটেজ প্রধানমন্ত্রী দেখেছেন কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দিয়েও প্রশ্ন, এতদিনে কেন কাউকে ধরা হলো না?

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আরেকটি বক্তব্য শুনে দারুণভাবে বিস্মিত হতবাক হয়েছি তিনি বলেছেন 'এরশাদ সাহেব তার ক্যাডার বাহিনী দিয়েও কোরআন পুড়িয়েছেন' মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সবিনয়ে বলতে চাই, কোরআন পোড়ানোর কথা আমার কানে যাওয়াও পাপ মনে হয় দেশের একজন প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে যা বের হয় তা কোনো সাধারণ কথা নয় তা আইনের সমতুল্য সুতরাং প্রধানমন্ত্রীর যে কোনো বক্তব্য মর্যাদাপূর্ণ হবে সেটাই বাঞ্ছনীয় আমি কখনো কোনো ক্যাডার গড়ার রাজনীতি করি না আমার দলের কর্মীরা রাজপথে পিস্তল-বন্দুক নিয়ে যুদ্ধে নামে না যদি তা কখনো দেখি তাদের জায়গা আমার দলে হবে না মে আমার দলের কর্মীদের ওপর নির্দেশ ছিল নির্দিষ্ট স্থানে হেফাজতের তৃষ্ণার্ত কর্মীদের পানি পান করানোর কিন্তু ওই দিনে কয়েকজন কর্মী একটা মিছিল করেছে, এমন কিছু ছবি পত্রিকায় প্রকাশের পর তাদের শোকজ করেছি ওইদিন পিস্তল নিয়ে গুলি করার ছবিও টিভি চ্যানেলে দেখা গেছে এবং পত্রিকায় হামেশা ধরনের ছবি ছাপা হতে দেখি কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তা আমরা জানি না বা দেখি না প্রধানমন্ত্রী বললেন, আমার ক্যাডাররা নাকি কোরআন পুড়িয়েছে আমার অনুরোধ, তাদের চিহ্নিত করা হোক আমি তাদের বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নিয়ে আইনের হাতে সোপর্দ করব ওইদিন যারা ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে তাদের সবাইকে গ্রেফতার করা হোক সেখানে যদি আমার দলের কোনো কর্মী থাকে তাহলে তাকে ধরেও শাস্তি দেওয়া হোক কোরআন পোড়ানোর অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হোক, আমি জোর গলায় দাবি জানাই উপসংহারে বলতে চাই, হেফাজতে ইসলামের কোনো কর্মী জঙ্গি ছিলেন না ইসলাম নবী (সা.)-এর অবমাননায় তারা আহত হয়ে বিচারপ্রার্থনা করেছিলেন মাত্র একটি মহল তাদের সেই অনুভূতিকে ব্যবহার করতে চেয়েছিল ফলে তারা হয়েছে পরিস্থিতির শিকার মার খেয়েছেন হেফাজত কর্মীরা, রক্তও দিয়েছেন তারা, আবার বদনামও জুটেছে তাদের ভাগ্যে আলেম-ওলামাদের মনে যে আঘাত লেগেছিল তার কোনো উপশম ছাড়াই তাদের আন্দোলন আপাতদৃষ্টে প্রশমিত হয়েছে তবে এটা হয়তো বাহ্যিক মনের দ্রোহের পরিসমাপ্তি ঘটেনি রাসূলপ্রেমে পাগল এই মানুষগুলো ইসলামের মর্যাদা রক্ষায় যে প্রতিরোধের প্রাচীর গড়ে তুলেছিলেন তার রেশ থেকে যাবে অনন্তকাল ধরে যখনই ইসলাম রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মর্যাদার ওপর আঘাত আসবে তখনই ছাইচাপা আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠবে